Khoborerchokh logo

আমাদের দেশে সকল প্রকার মাদকদ্রব্য আসে প্রতিবেশী দেশ থেকে: আইজিপি 366 0

Khoborerchokh logo

আমাদের দেশে সকল প্রকার মাদকদ্রব্য আসে প্রতিবেশী দেশ থেকে: আইজিপি

  বৃহস্পতিবার  দুপুরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্রের (ওয়েসিস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি বলেন আমাদের দেশে সকল প্রকার মাদকদ্রব্য আসে প্রতিবেশী দেশ থেকে । সব মাদকের কোনোটাই কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তৈরি হয় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে আমরা যে কাজটা করার চেষ্টা করি সেটা হচ্ছে মাদকের সাপ্লাই কমানো। এসব দমনের জন্য ছয় থেকে সাতটা বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে। ফেনসিডিল আসে প্রতিবেশী এক দেশ থেকে, ইয়াবা আসে প্রতিবেশী আরেক দেশ থেকে। এখন আবার আসছে আইস, যা প্রতিবেশী এক দেশসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকে আসে। 
ড.বেনজীর আহমেদ আরও বলেন,কাস্টম বিভিন্ন পোর্টে মাদক দমনে কাজ করেছে। কিন্তু যদি ডিমান্ড থাকে, কোনো না কোনোভাবে দেশে মাদকের সাপ্লাই হবেই। সেটা যদি হয় ১ কোটি, ৮০ লাখ ও ৩৬ লাখ তাহলে প্রত্যেক দিন এই মাদক কোনো না কোনোভাবে দেশে প্রবেশের চেষ্টা হবেই। সে কারণে অবশ্যই আমাদের মাদকের ডিমান্ড কমাতে হবে। ডিমান্ড কমাতে হলে যারা মাদকাসক্ত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ওয়েসিস আমাদের অতি ক্ষুদ্র একটি উদ্যোগ। 
গরিব বা ধনী পরিবারের কেউ যদি মাদকাসক্ত হয় তাহলে পরিবারটির কী অবস্থা হয় পুলিশে চাকরি করার সুবাদে তা দেখার দুর্ভাগ্য আমার অনেকবার হয়েছে। এই সমাজের অনেক সম্মানিত ব্যক্তির নীরব কান্না দেখতে হয়েছে আমাকে। এই গোপন কান্না এত কষ্টের যা কারও সঙ্গে শেয়ারও করা যায় না সামাজিক মর্যাদার কারণে। কিন্তু আমার কাছে এসে শেয়ার করেছেন। এমন ঘটনা একটা না অহরহ ঘটনা আছে। এ রকম ঘটনা হয়েছে যে, তার ছেলে, স্ত্রী কিংবা মেয়েকে গোপনে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। কারণ সমাজে তার সম্মান রয়েছে, তাই কেউ যেন জানতে না পারে।
আইজিপি বলেন, প্রচলিত মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে নাম-পরিচয় দিতে হয় বলে অনেকেই ছেলে-মেয়েদের চিকিৎসা দিতে আগ্রহী হন না। আবার যাকে চিকিৎসা করবে সে চিকিৎসা নেবে না। পরিবার চায় ধরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে, যা অনেক সময় আইনসম্মত নাও হতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধান রয়েছে, এ দেশের মানুষ স্বাধীন ও মুক্ত। তাই কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোথাও নিয়ে যাওয়া যায় না। এরকম অনেক সমস্যা আমি দেখেছি। 
 এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ৮০ লাখ, আবার কেউ কেউ বলেন ১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালে জনস্বার্থ ইনস্টিটিউটের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৩৬ লাখ। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে মোট বেড মাত্র সাত হাজার। 
পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের আরেকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণের কথা উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান বলেন, আমরা মানিগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীর মনোরম পরিবেশে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র বা হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি। সেখানে আমরা ইতোমধ্যে নদীর তীরে ২০ বিঘা জমি কিনেছি। আমি পারলে ১০০ বিঘা জমি কিনতে চাই। সেখানের পরিবেশে ঢুকলে মানুষের মন যেন ভালো হয়ে যায়। আমরা এমন একটি পরিবেশে ৫০০ থেকে এক হাজার বেডের হাসপাতাল তৈরি করতে চাই। এটাকে মাদক চিকিৎসার ক্ষেত্রে রিজনাল হাব করতে চাই। 
এ সময় মেডিকেল ট্যুরিজম নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, বলা হয় আমাদের দেশ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার মেডিকেল ট্যুরিজম হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংককে আমাদের দেশের মানুষ যায় মেডিকেল ট্যুরিজমের জন্য। যাদের আরও ভালো সামর্থ্য আছে তারা আরও উন্নত দেশে যায়। এ ধরনের মোস্ট আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও কিন্তু আমাদের দেশে গড়ে তোলা সম্ভব।
সেক্ষেত্রে বেস্ট যন্ত্রাংশ কেনা বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে বেস্ট বিশেষজ্ঞ। যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্তত ৫০ শতাংশ বিদেশি বিশেষজ্ঞকে বাংলাদেশে কাজ করার অনুমতি দেন তাহলে বিশ্বমানের হাসপাতাল বাংলাদেশেও গড়া সম্ভব। যদিও বর্তমান আইন অনুযায়ী এটা সম্ভব নয়। তাহলে মেডিকেল ট্যুরিজমের নামে এত টাকা দেশ থেকে বাইরে যাবে না। তাছাড়া ধীরে ধীরে এর মাধ্যমে আমাদের দেশেও বিশেষজ্ঞ তৈরি হবে। এ ধরনের হাসপাতাল নির্মাণে বড় বড় করপোরেট কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসতে পারে। এক্ষেত্রে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টও এগিয়ে আসতে পারে। না হলে এ টাকার পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকবে।’ 
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে পুলিশ হাসপাতালে ক্যানসার ইউনিটের দাবি জানিয়ে আইজিপি বলেন, আমাদের পুলিশের যে ধরনের কাজ তাতে আমরা কমন কিছু রোগে আক্রান্ত হই। এর মধ্যে একটা হচ্ছে কিডনির সমস্যা। পুলিশ হাসপাতালে আমরা ইতোমধ্যে ৩৪টি কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন করেছি। অন্যতম আরেকটি রোগ হচ্ছে হার্টের সমস্যা। আমাদের জবস্ট্রেস থেকে আরেকটা রোগ হয় ক্যানসার। আমাদের প্রচুর লোক আছে যারা ক্যানসারে আক্রান্ত। আমরা চেষ্টা করি তাদের সাধ্যমতো সাহায্য করার। ক্যানসারের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। একজন ক্যানসার আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করার আগে তার পরিবারকে রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে যায়। এজন্য পুলিশ হাসপাতালে আমরা একটি ক্যানসার ইউনিট করতে চাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাবো আগামী বছরের মধ্যে ইউনিট করে দেওয়ার জন্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা রাখি। 
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান।


সম্পাদকঃ আলমগীর কবীর, ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মনিরুজ্জামান। উপদেষ্টা সম্পাদক পরিষদঃ শাহিন বাবু । অস্থায়ী কার্যালয়ঃ নাওজোড়, বাসন, গাজীপুর মেট্রো পলিটন, গাজীপুর।
যোগাযোগঃ ০১৭১১৪২১৪৫১, ০১৯১১৮৮৯০৯৩, ই-মেইলঃ khoborersomoy24@gmail.com, web: www.khoborersomoy.com